
বিএমতে “এ্যাসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্যা ইমার্জেন্সি রুম” বিষয়ক সিএমই অনুষ্ঠিত
24 Mar, 2025 10:00 AM - 24 Mar, 2025 12:00 PM |
বিএমতে দুঘর্টনাসহ সকল ধরণের আহত রোগীদের সর্বাধুনিক জরুরি চিকিসাসেবা নিশ্চিত করতে
“এ্যাসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্যা ইমার্জেন্সি রুম” বিষয়ক সিএমই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আজ সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ইং তারিখে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ এবং প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া-এর যৌথ উদ্যোগে “এ্যাসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্যা ইমার্জেন্সি রুম (CME on Essential of Trauma Care in the Emergency Room)” বিষয়ক সিএমই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সিএমই প্রোগ্রামে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আজকের সিএমইতে আহত রোগীদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বাধুনিক জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, জ্ঞানগর্ভ, প্রজ্ঞাময়, বাস্তবধর্মী প্রবন্ধ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আসাহি মাকসুরা হোসাইন। অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম এর সাভাপতিত্বে ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ এর সঞ্চালনায় বিএসএমএমইউর প্রক্টর অর্থোপেডিক সার্জন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ আলী ফয়সাল, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মোঃ শাহিদুল হাসান, প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া-এর ইলেকটেড সভাপতি ডা. শাকিল ফরিদ, হসপিটাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আকতারুজ্জামান, প্লাস্টিক সার্জন ডা. তৌফিক এলাহী প্রমুখ বিএমইউ এর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীবন্দৃ উপস্থিত ছিলেন।
সিএমই প্রোগ্রামে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে বাংলাদেশে ৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আহতদের সংখ্যা এর তিন গুণ। অন্যান্যভাবে আহতদের সংখ্যা তো রয়েছেই। এই অবস্থায় আহত রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে জীবন বাঁচাতে উন্নত ইমার্জেন্সি রুম বা বিভাগ বা ইমার্জেন্সী মেডিসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশে এ ধরণের রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আধুনিক ইমার্জেন্সি সেবা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র কক্সবাজারে আহত রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ইমার্জেন্সি মডেল ওয়ার্ড চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) এর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ আহত রোগীদের বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। আমাদেরকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। মাননীয় উপাচার্য প্লানেটারি হেলথ একাডেমিয়াকে বিএমইউ এর সাথে যৌথভাবে এ্যাসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্যা ইমার্জেন্সি রুম বিষয়ক সিএমই প্রোগ্রাম আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ দেন। তিনি আরো বলেন, ট্রমা চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার সংমিশ্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি বিভাগে সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন রোগীর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরণের শিক্ষামূলক আয়োজন আরও বেশি হওয়া দরকার।
বিএমইউ এর প্রক্টর ও অর্থোপেডিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনা ও সংঘর্ষসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মানুষ আহত হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা খুব একটা নেই। এ্যাসেনশিয়াল অফ ট্রমা কেয়ার ইন দ্যা ইমার্জেন্সি রুম বিষয়ক সিএমই প্রোগ্রাম বিএমইউসহ বাংলাদেশে আহত রোগীদের জন্য বিদ্যমান ইমার্জেন্সীসেবাকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করবে। যা দেশে বিভিন্নভাবে ইনজুরিতে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচানোসহ হাজার হাজার রোগীর আরোগ্যলাভের মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রমা রোগীর সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা কি হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আসাহি মাকসুরা হোসাইন। তিনি ট্রমা রোগীর শুরুর ব্যবস্থাপনা, জরুরি কক্ষের করণীয় এবং বিশ্বমানের চিকিৎসা পদ্ধতির উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবিসিডিই (ABCDE) এয়ারওয়ে, ব্রিথিং, সারকুলেশন, ডিসএ্যাবালিটি, এক্সপোজার (Airway, Breathing, Circulation, Disability, Exposure) পদ্ধতি এখন ট্রমা কেয়ারের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকরা উন্নত বিশ্বে ব্যবহৃত কৌশলগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, ট্রমা রোগীদের ক্ষেত্রে গোল্ডেন আওয়ার বা প্রথম এক ঘণ্টার চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রোগীকে দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া গেলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের অবশ্যই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং প্রোটোকল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ট্রমা কেয়ার শুধুমাত্র জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বিষয় নয়, এটি সার্বিকভাবে সব চিকিৎসকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সার্জারি, অর্থোপেডিকস, নিউরোসার্জারি, রেডিওলজি এবং এনেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি রোগী দ্রুত চিকিৎসা পেতে পারে।
সিএমইউতে ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগ চালু সময়েরই দাবি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জরুরি বিভাগে ট্রমা চিকিৎসার মূলনীতি বিষয়ক সিএমইটি অত্যন্ত সময় উপযোগী হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে জরুরি ও ট্রমা কেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ইনজুরিতে আহত রোগীদের দক্ষ ট্রমা চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্য পূরণে ট্রমা চিকিৎসার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করার কৌশল নির্ধারণে এ ধরণের সিএমই ভূমিকা রাখবে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য ট্রমাজনিত ইনজুরির হার ক্রমাগত বাড়ছে। তাই, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের ট্রমা কেয়ার সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের সিএমই চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজকের সিএমইতে প্রাথমিক ট্রমা কেয়ার এবং জরুরি কক্ষের ভূমিকা, গোল্পেন আওয়ার কনসেপ্ট এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার কৌশল, এবিসিডি পদ্ধতির ব্যবহার, ট্রমা রোগীদের সঠিক তদারকি ও রেফারাল সিস্টেম, প্রোটোকল ভিত্তিক চিকিৎসার গুরুত্ব, বাংলাদেশে ট্রমা কেয়ারের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইত্যাদি আলোচিত হয়।
এই সিএমই থেকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করেন এবং ট্রমা রোগীদের আরও দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা উদ্বুদ্ধ হবেন। চিকিৎসকদের আহত রোগীদের সেবা দানের জন্য জরুরি বিভাগের প্রস্তুতি এবং ট্রমা রোগীর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সমৃদ্ধ করবে। সেমিনারের আয়োজকরা ভবিষ্যতেও এ ধরণের আরও শিক্ষামূলক আয়োজনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সম্পাদনা: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজমুদার।