বিএসএমএমইউতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত

বিএসএমএমইউতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত

17 Mar, 2025 08:30 AM - 17 Mar, 2025 10:30 AM |

বিএসএমএমইউতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ হতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত
২ শতাধিক রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়

বিএসএমএমইউতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিক দৃষ্টিকোন থেকে বিএসএমএমইউ থেকে প্রদানকৃত চিকিৎসাসেবা নিয়ে ‘মেডিক্যাল রেসপন্স অফ বিএসএমএমইউ টু দি জুলাই আপরাইজিং: সার্জিক্যাল এন্ড অর্থোপেডিক পারসপেকটিভ (গবফরপধষ জবংঢ়ড়হংব ড়ভ ইঝগগট ঃড় ঃযব ঔঁষু টঢ়ৎরংরহম: ঝঁৎমরপধষ ধহফ ঙৎঃযড়ঢ়বফরপ চবৎংঢ়বপঃরাবং )’ শীর্ষক ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখ, এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে বিএসএমএমইউ এর সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্র জনতা বিভিন্ন ধরণের শারীরিকভাবে আঘাপ্রাপ্ত হন এবং গুলিবিদ্ধ হন যা চিকিৎসাসেবা প্রদানের দৃষ্টিকোন থেকে এক বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিএসএমএমইউ এর বর্তমান প্রশাসনের সহায়তায় যারা বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও জখম হয় তাদের চিকিৎসায় বিশেষত জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জন ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞরা আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে কাজ করেন। কাটা ও গুলির আঘাত, রক্তক্ষরণ, হাড় ভেঙে যাওয়া, জয়েন্ট ও স্নায়ু সমস্যা ইত্যাদি চিকিৎসায় তারা বিশেষ অবদান রাখেন। বর্তমানে আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাসেবা প্রদান ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছেন বিএসএমএমইউ বর্তমান প্রশাসন ও সার্জন, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞবৃন্দ।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, পেশাগত ও প্রতিষ্ঠানগত দায়বদ্ধতা থেকে আজকের এই সেমিনারের আয়োজন। এই সেমিনারের আয়োজন সময়ের দাবি, জাতীয় দাবি এবং আন্তর্জাতিক আকাঙ্খার প্রতিফলন। আহতদের নিয়ে ডকুমেন্টেশন সংরক্ষণ বা দালিলিক প্রমাণ হিসেবে এই সেমিনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছিলেন ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পূর্বে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে তাদের প্রাপ্য সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগ ছিল না। তবে ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের দুয়ার খুলে যায় এবং বিএসএমএমইউ এর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। শুরুতে বিএসএমএমইউ এর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ আহতদের চিকিৎসায় বিরাট অবদান রাখে। পরবর্তীতে মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এবং বর্তমানে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আহতদের চিকিৎসা ও পুনবার্সনে কাজ করে যাচ্ছে। বিএসএমএমইউ এর বর্তমান প্রশাসন আহতদের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি তাদের পুনবার্সনেও সহায়তা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।    

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউ অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছে। সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিক সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আহতদের পুনরুদ্ধারে বিরাট অবদান রেখেছে। এরফলে অনেক আহত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছে।

সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা এর সভাপতিত্বে ও ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (মামুন) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম। সেন্ট্রাল সেমিনারে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের হ্যান্ড সার্জন ডিভিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ আশরাফুল ইসলাম এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফারুক ইশতিয়াক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের হ্যান্ড সার্জন ডিভিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, অর্থোপেডিক সার্জাারি বিভাগ হতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ২০০ এরও বেশি রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসায় প্রদান করা হয়। তার মধ্যে ৬৫ জন রোগীকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যার মধ্যে বুলেট ইঞ্জুরি ২৬, পিলেট ইঞ্জুরি ২১, শারীরিক আঘাত ১৬, মেরুদন্ডের ব্যাথা ১৫, উপর থেকে পড়ে আঘাত পাওয়া ২ জন রোগী রয়েছে। বিভিন্ন ইউনিটে ৩৯টি মেজর অপারেশন করা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে পিলেট পাওয়া যায়, যেগুলি বেশী ব্যাথার কারণ সেগুলি অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়। বেশীরভাগ অপারেশন নার্ভ ইঞ্জুরির এবং নার্ভ ইঞ্জুরির বিভিন্ন ধরণের নার্ভ সার্জারি করা হয়। যেমন নার্ভ রিপেয়ার, গ্রাফটিং, নিউরোলাইসিস, নার্ভ ট্রান্সফার ও টেনডন ট্রান্সফার অন্যতম। ১৩ জন রোগীর বিভিন্ন ধরণের ভাঙ্গা হাড়ের অপারেশন করা হয় এবং এছাড়াও কিছু অপারেশন ছাড়াও চিকিৎসা দেয়া হয়। হাঁটুর বুলেট আথ্রোসকপির মাধ্যমে বের করা হয়। মেরুদন্ডের আঘাত পাওয়া রোগীদের কনজারভেটিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়। মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়া রোগীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে সু-চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশীরভাগ রোগীর চিকিৎসায় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলেটেশন বিভাগের সহায়তা নেওয়া হয়। এসব রোগীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফ্রি বা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সম্পাদনা: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।